ঢাকা, মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪

সেশনজটে চরম দু:শ্চিন্তায় সাত কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থী  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪৩, ২২ মে ২০১৮ | আপডেট: ১১:০৭, ২৩ মে ২০১৮

শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সেশনজট নিরসনে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে ইতোমধ্যে এক বছর দুই মাস অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এনিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন থেকে নানা ধরনের উদ্যোগের কথা বলা হলেও সেশনজটের খপ্পরে পিছিয়ে পড়ছে অধিভুক্ত এসব শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায় অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা অর্নাস-মাস্টার্স শেষ করে চাকরি নিলেও তাদের শিক্ষা জীবনই শেষ হচ্ছে না। এমনকি অধিভুক্ত হওয়ার সময় একাডেমিক ক্যালেন্ডার, নতুন সিলেবাস এবং পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করার কথা থাকলেও পুরাতন সিলেবাসে চলছে পাঠাদান।

এ বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সবুজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হওয়ার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা এক বছর পিছিয়ে পড়েছি। এছাড়া সময় নতুন সিলেবাসে পাঠদানের কথা থাকলেও প্রণায়ন করা হয়নি। পুরাতন সিলেবাসে দেওয়া পাঠদান তবে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র করছে সিলেবাসের বাহির থেকে। যে কারণে অনেকে কাঙিক্ষত ফল মিলছে না।

ঢাকা কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন বলেন, ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর তার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। ওই পরীক্ষার পর প্রায় ১৮ মাস গেছে, রানা কিন্তু সেই দ্বিতীয় বর্ষেই আছে। আগামী ৩১ তারিখ পরীক্ষা নেওয়ার কথা আছে। বর্ষ পরিবর্তন করতে পরীক্ষা হওয়ার কথা ১২ মাস অন্তর। কিন্তু ১৮ মাসে বর্ষ পরিবর্তন করতে পাচ্ছি না।

সুমন বলেন, তার সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া বন্ধুরা কয়েক দিন পর তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দেবে। কিন্তু আমরা কবে দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করবো সে হিসেবের কোনো কিনারা করতে পারছি না।
একই কলেজের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগে  ছাত্র আল আমিন, পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবি করতে গিয়ে চোখ হারিয়েছে সিদ্দিকুর রহমান। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলে বলে ক্লান্ত আমরা। আন্দোলন করতে গিয়ে আর চোখ হারাতে চাই না। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশের কোনো খবর নেই। একই সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হওয়া বন্ধুরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলেছে।

সেশনজটের কারণে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও এখন পিছিয়ে আছে। ইডেন মহিলা কলেজের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুমি বলেন, প্রথম বর্ষেই আমরা কয়েক মাসের সেশনজটে পড়ে গেছি। গত এপ্রিলে দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি। অথাৎ আমাদের সেশনে ভর্তি হওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোতে ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসবে। আমরা তাদের থেকে অনেক পিছিয়ে গেলাম।

জানা গেছে, প্রায় সব শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পিছিয়ে গেছে। কথা হয়, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নাবিলা বারেক বৃষ্টির সঙ্গে। নাবিলা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর পরীক্ষার প্রশ্নেও অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক প্রশ্নই কমন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষাগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত থাকছেন, যেটি অনেকেই চায় না। বৃষ্টি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সম্মান কোর্স শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছি মাত্র। শিক্ষার্থীদের সাত কলেজের নানা অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান  একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আসলে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্ত করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এখন এটা সমন্বয় করতে কাজ চলছে। এটা আমাদের কাছে বিরাট এক দায়িত্ব।

উপাচার্য আরও বলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি হয়েছে তাদের কোনো সমস্যা পোহাতে হবে না আশা করি। তারা ভালো ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলে আসবে।

ইডেন মহিলা কলেজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের আয়েশা হোসেন বলেন, গত জানুয়ারিতে প্রথম বর্ষে তারা ক্লাস শুরু করেছেন। নিয়মিতই তার ক্লাস পরীক্ষা চলছে। সেশনজটের খপ্পরে পড়ে জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান তিনি।

অভিভুক্ত সাত কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বর্তমানে এক লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী এবং এক হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন।

টিআর/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি